রঘু ডাকাতের গল্প – Story of Raghu Dakat

রঘু ডাকাতের গল্প

আসন্ন দূর্গা পূজায় মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দেব অভিনীত রঘু ডাকাত সিনেমার প্রধান চরিত্র রঘুকে নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। তাই আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে প্রকৃত রঘু ডাকাতের জীবণের ঘটনাসমূহ সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হয়েছে।

ছেলেদের ভয় দেখানো থেকে শুরু করে দাপুটে লোকদের পরিচয়ে “রঘু ডাকাত” নামটা আজও বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে আছে। তাকে নিয়ে অসংখ্য গল্প শোনা যায়—কখনো তিনি গরিবের বন্ধু, আবার কখনো ভয়ংকর নরবলির নায়ক।

রঘু ডাকাতের জন্ম

রঘু ডাকাতের জন্মসাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ গবেষকের ধারণা, তার জন্ম হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে। জন্মতারিখ স্পষ্ট না হলেও জানা যায় তার আসল নাম ছিল রঘু ঘোষ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ লাঠিয়াল—লাঠি খেলায় তাকে হারাতে পারে এমন মানুষ সেই সময় খুঁজে পাওয়া যেত না।

তার জীবদ্দশায় ভারত ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। সেই সময়ে নীল চাষের জোরাজুরি শুরু হয়। কৃষকরা যদি নীল চাষে অস্বীকৃতি জানাত, তাদের নির্মমভাবে প্রহার করা হতো। রঘুর বাবা ছিলেন কৃষক, এবং নীল চাষে রাজি না হওয়ায় তাকে ভয়াবহ নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। এই ঘটনাই রঘুর জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ করে সাধারণ মানুষকে একত্রিত করে গড়ে তোলেন লাঠিয়াল বাহিনী।

এরপর নীলকুঠি, অত্যাচারী জমিদার ও তাদের সহযোগীদের বাড়িঘর লুট করা শুরু হয়। রঘু ডাকাত ও তার দল ধনীদের কাছ থেকে লুট করা সম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার ‘রবিন হুড’। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গে ডাকাতি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ইংরেজরা প্রতিটি থানায় ডাকাত ধরার জন্য আলাদা বিভাগ তৈরি করে। পুলিশের চাপ বাড়লে রঘু ডাকাত ও তার ভাই বিদুভূষণ ঘোষ দেবীপুরের পাশের এক জঙ্গলে আশ্রয় নেন। সেখানেই তারা একটি নতুন গ্রাম গড়ে তোলেন। রাতের অন্ধকারে পাঁচটি ব্রাহ্মণ পরিবার এনে বসতি গড়ে তোলা হয়। গ্রামের পুরনো নাম ছিল নিশিনগর, পরে তা বদলে হয় নিশিরাগড়।

রঘুর ডাকাত হয়ে ওঠা

রঘু ডাকাতের গল্পে দেবী কালীর নাম প্রায় সর্বত্রই জড়িয়ে আছে। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেবী কালীকে দেখেন এবং দেবীর নির্দেশে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে নিয়মিত কালীপূজা শুরু হয়। দেবীর ভোগ হিসেবে পোড়া ল্যাটা মাছ দেওয়া হতো।

ডাকাতি শুরু করার আগে জমিদারদের কাছে চিঠি পাঠাতেন রঘু ডাকাত। তার বিশ্বাস ছিল পূজা দিয়ে ডাকাতি করলে ধরা পড়ার ভয় থাকে না। মজার বিষয় হলো, তিনি কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি। এমনকি একবার নৈহাটি থানার দারোগাকে চিঠি পাঠিয়ে দেখা করার কথাও জানান। পুলিশ সতর্ক হয়ে প্রস্তুত থাকলেও রঘু কৌশলে থানায় গিয়ে দারোগার সঙ্গে দেখা করে আসেন—দারোগা তাকে চিনতেই পারেননি!

কথিত আছে, রঘু ডাকাত কালীপূজায় নরবলি দিতেন। বলা হয়ে থাকে, কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতে যে-ই রাস্তা দিয়ে যেত, তাকেই ধরে এনে বলি দেওয়া হতো। একদিন কালীভক্ত রামপ্রসাদ সেনকে ধরে আনা হয়। বলি দেওয়ার আগে তিনি দেবীর সামনে গান গাওয়ার অনুমতি চান। রামপ্রসাদের কণ্ঠে ‘তিলেক দাড়া ওরে শমন বদন ভরে মাকে ডাকি’ গান শুনে রঘু ডাকাত দেবীর রূপ দেখতে পান রামপ্রসাদের মধ্যে। সেই থেকে তিনি নরবলি বন্ধ করে পাঁঠাবলি শুরু করেন।

আজও রঘু ডাকাত বাঙালির সংস্কৃতিতে অমর হয়ে আছেন। তার গল্প, কাহিনি, কিংবদন্তি এখনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। গ্রামবাংলায় ছেলেদের ভয় দেখাতে এখনো বলা হয়—“চুপ করো, না হলে রঘু ডাকাত আসবে!”

আরো পড়ুন…..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top